হাওজা নিউজ এজেন্সি'কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কোমের হাওজায়ে ইলমিয়ার বিশিষ্ট অধ্যাপক হুজ্জাতুল ইসলাম আখুন্দি বলেন, “আল্লামা আমিনির নাম গাদিরের নামের সঙ্গে চিরকাল অমর থাকবে। যারা গাদিরের ঘটনা নিয়ে গবেষণা, আলোচনা বা বক্তৃতা করতে চান, তারা সবাই শিয়া জগতের মহাগ্রন্থ ‘আল-গাদির’-এর প্রতি নির্ভর করেন।”
তিনি বলেন, “আল-গাদির হচ্ছে এক অনন্য সাধক ও গবেষকের আজীবন শ্রমের ফসল। আল্লামা আমিনি চল্লিশ বছর ধরে ইসলামের ইতিহাস ও পাণ্ডুলিপি নিয়ে গবেষণা করেছেন—ইরাক, ইরান, ভারত, সিরিয়া ও তুরস্কের গ্রন্থাগার ঘুরে সত্য উদ্ঘাটনে জীবন উৎসর্গ করেছেন।”
হুজ্জাতুল ইসলাম আখুন্দি বলেন, “আল্লামা আমিনিকে ‘প্রেমিক’ বলা যথার্থ। যারা তাঁকে প্রত্যক্ষভাবে দেখেছেন কিংবা তাঁর বইয়ের পাঠে গভীরভাবে নিমগ্ন হয়েছেন, তারা জানেন—তিনি সত্যিই এমন এক প্রেমিক ছিলেন যিনি রাত-দিন, গরম-শীত কোনো কিছুই চিনতেন না। তাঁর লক্ষ্য ছিল গাদিরের বার্তা ও নবী (সা.) ঘোষিত নেতৃত্বের ঐতিহাসিক সত্যকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং এর ওপর জমে থাকা অবহেলা ও বিকৃতির ধুলো সরিয়ে ফেলা।”
তিনি আরও বলেন, “আল-গাদির প্রকাশের আগে বহু লেখায় গাদির ঘটনার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছিল। কেউ দাবি করত, ‘গাদির সম্পর্কে কোনো সহিহ হাদিসই নেই’; কেউ যেমন ইবনু তায়মিয়া বলেছেন, ‘গাদিরের হাদিস নির্ভুল নয়’; আবার ইবনু হাজম বলেছেন, ‘কোনো বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী এটি বর্ণনা করেননি।’ এমনকি কেউ কেউ বলত, ‘ইমাম আলী (আ.) গাদিরের ঘটনায় উপস্থিতই ছিলেন না।’ আর কেউ কেউ দাবি করত, ‘গাদির কোনো ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, বরং নবী (সা.)-এর কোনো যুদ্ধের নাম।’”
হুজ্জাতুল ইসলাম আখুন্দি বলেন, “যদিও এ ধরনের বক্তব্য খুব বেশি ছিল না, তবে এমন বিভ্রান্তিকর মত ছড়িয়ে পড়েছিল। এসবই আল্লামা আমিনিকে আজীবন নিবেদিতভাবে গবেষণায় প্রেরণা দেয়—যাতে তিনি বিশ্ববাসীর সামনে গাদিরের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় সত্য স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারেন। এজন্য তিনি এক গ্রন্থাগার থেকে অন্য গ্রন্থাগারে গেছেন, হাতে হাতে পুরনো পাণ্ডুলিপি ঘেঁটেছেন, যতক্ষণ না প্রমাণগুলো সুনিশ্চিত হয়।”
তিনি আরও জানান, “আল্লামা আমিনি বিশেষভাবে নাজাফের গ্রন্থাগারগুলোতে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা চালান এবং সেখানকার বহু বিরল দলিল সংগ্রহ করেন।”
হুজ্জাতুল ইসলাম আখুন্দি বলেন, “আল্লামা আমিনির জীবন ও কর্মযাত্রার বিস্তারিত বিবরণ তাঁর পুত্র শাইখ রেজা আমিনি উপস্থাপন করেছেন। দুঃখজনকভাবে, আল-গাদির-এর পরবর্তী কিছু সংস্করণে এ মূল্যবান ভূমিকাটি অনুপস্থিত। তবে গ্রন্থটির চতুর্থ সংস্করণে একশ পৃষ্ঠারও বেশি জায়গা জুড়ে আল্লামা আমিনির জীবনী ও তাঁর অনন্য সংগ্রামের বর্ণনা সংযোজিত রয়েছে।”
আপনার কমেন্ট